২৭/০৭/২০১৭ ,বৃহস্পতিবার।
ঝাড়গ্রাম
-
আমাদের
Dear Jhargram Team পৌঁছে
গেল ঝাড়গ্রামের অন্যতম বিশিষ্ট শিল্পী - “শিবশঙ্কর সিংহ” বাবুর বাড়িতে।
ঝাড়গ্রামের যে কোনো পুজোতে
প্রায় সিংহভাগ মণ্ডপেই ওনার গড়া প্রতিমা শিল্প আমরা দেখতে পাই প্রতি
বছর। খুব ইচ্ছে ছিল অনেক দিন থেকেই যে আমরা ওনার কাজ গুলো সামনে থেকে দেখবো।
বাড়ীর
সামনেই রাস্তা থেকে দেখা
যাচ্ছিলো প্রতিমা গড়ার কাজ। গেট এ প্রবেশ করতেই সামনে সারিবদ্ধ প্রতিমার কাঠামো দাঁড় করানো দুধারে। আমাদের ডাক শুনে উনি বেরিয়ে এলেন জিজ্ঞাসু চোখে। আমরা নিজেদের পরিচয় পর্ব সেরে ওনার কাছ থেকে কিছু Photograph
আর ছোট্ট একটা Interview
- এর আবদার করলাম , উনি এক বাক্যে রাজিও হয়ে গেলেন।
আমরা কিছু প্রশ্ন করে ফেললাম –
আপনি ঠিক
কত বছর ধরে
এই প্রফেশন
এ আছেন
??
-প্রায় ৩০ বছর
হলো।
কাজটা শুরু কি আপনার পূবপুরুষের টাইম থেকেই ?
-না !আমি নিজেই আমার
পূর্বপুরুষের মধ্যে কেউ নেই। আমি
Political Science এ মাস্টার্স করেছি, তারপর চাকরি জোটেনি - আমার ছোটবেলা থেকেই মূর্তি
বানানোর নেশা তাই সেটাকেই পেশা করে নিয়েছিলাম।
আপনার আদি বাড়ি কোথায় ?
-আমরা
হচ্ছি বিহারি সাশারাম
এ আমাদের বাড়ি (বিহার
আর উত্তর প্রদেশ বর্ডার
)। যদিও আমাদের জন্ম এখানেই।
আপনার ব্যাপারে একটু যদি আমাদের বলেন –
আমি অবাঙালি আর আমার এই নেশা টা ছিল ছোটবেলা থেকেই - এর জন্যে প্রচন্ড মারধর খেতাম বড়োদের কাছে। আমার বাবা এই সব কাজ গুলো কে সাপোর্ট করেননি বলতেন - এই সব কাজ কুমোরদের কাজ
এই সব ভালো জাতের ছেলেরা করেনা ,অতয়েব তুমি এই সব কাজ ছেড়ে দাও দিয়ে পড়াশোনায় মন দাও।
আমার নিজের দাদা ছিল Additional
SP এই সবে Retire করেছে।
আমার দাদা তখন আমায় কল্যাণী নিয়ে
গিয়েছিলো , ওখান থেকেই আমার পলসায়েন্স এ মাস্টার্স করা। দাদা চেয়েছিলো ওদের সাথে ওখানেই থাকি আর
আমার এই সব কাজ বন্ধ হয়ে যাবে । ওখানে
গিয়েও আমার আমার নেশাটাই আমায় টানতো।
পুজোর
সময় হলেই আমার
হাত কিলবিল
করতো। তো
আমি কাজ শুরু করলাম। দাদা
জানতে পারলো
যে আমি এই সব
কাজ করছি তখন আমায়
সবাই অনেক অপমান করেছিল
, তাও আমি কাজ ছাড়িনি।
আমি ঝাড়গ্রাম পেপার মিল এ
কাজ করতাম, ১৯৯৬ এ
ঢুকেছিলাম ,তারপর
মিল বন্ধ হয়ে গেল
- এরপরে আমার মূর্তি গড়ার নেশাটা পেশায়
বদলে ফেললাম। আমার স্ত্রী আমায় প্রথম থেকেই আমায় আমার কাজ কে সাপোর্ট করেছে।
তারপর
থেকেই ৩০ বছর ধরে
করছি। আগে
৩/৪ টি করেই
করতাম। অনেক
কাপ জিতেছি , অনেক সার্টিফিকেট ও
পেয়েছি।
আপনার ঝাড়গ্রাম বা
ঝাড়গ্রামের
বাইরে
কেমন
কাজ
এর
অর্ডার
আসে
এখন
?
-ঝাড়গ্রাম
এ কোনো জায়গা বাদ নেই
, প্রায় সব জায়গার জন্যেই
কাজ করেছি , তাছাড়াও গিধনি
তে কাজ করেছি।
আপনার যে মাটি,অলংকার,পোশাক গুলো লাগে সেগুলো কোথা থেকে আসে ?
-মাটি আসে বৈতা থেকে পলি মাটি বা এটেল মাটি , কিছু মাটি আনাই ট্রান্সপোর্ট এর মাদ্ধমে কলকাতা থেকে - দুধে মাটি /কালো মাটি।অলংকার আর পোশাকগুলো মূর্তির ওপরে ডিপেন্ড করে যে যেমন অর্ডার দেবে সেই অনুযায়ী আনানো হয়। মাটি ,পোশাক,অলংকার বেশির ভাগ তাই আসে কলকাতা থেকে।
আপনার যে মাটি,অলংকার,পোশাক গুলো লাগে সেগুলো কোথা থেকে আসে ?
-মাটি আসে বৈতা থেকে পলি মাটি বা এটেল মাটি , কিছু মাটি আনাই ট্রান্সপোর্ট এর মাদ্ধমে কলকাতা থেকে - দুধে মাটি /কালো মাটি।অলংকার আর পোশাকগুলো মূর্তির ওপরে ডিপেন্ড করে যে যেমন অর্ডার দেবে সেই অনুযায়ী আনানো হয়। মাটি ,পোশাক,অলংকার বেশির ভাগ তাই আসে কলকাতা থেকে।
এবারে কি কোনো নতুনত্ব
কাজ
এর
ভাবনা
রয়েছে
আপনার
?
-আমি সাবেকি প্রতিমা গড়তে
ভালোবাসি। বছরে একবার মা আসেন তাই
মা কে মা এর
রূপ এ দেখতেই আমি
ভালোবাসি।আমায় অনেকেই অন্য রকম কাজ করতে বলেছিলো ছিল কিন্তু আমি আমি না করে দিয়েছি
সব সময়। এখন যারা আমায় কাজ দেয় তারা এসব ভালো করেই জানে যে আমি কি রকমের কাজ করি।আমি প্রতিমা গড়ার ক্ষেত্রে Experiment এ বিশ্বাসী নই।
এ বছর মোট কটা প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন
? আর আপনি কি
একাই সবটা
সামলান ?
- ১২ টা,গিধনি স্পোর্টিং ক্লাব , পুকুরিয়া গ্রাম , সংঘমিত্রা ব্যায়াম সমিতি ও অন্যান্য ।
আমার একটি ছেলে আছে নাম “গোপাল” , আমার ভাই এর মতো - ওর বাড়ি হচ্ছে টাঙিয়া।আমরা দুজন মিলে দরকারে রাত জেগেও কাজ গুলো সেরে ফেলি।
আমার একটি ছেলে আছে নাম “গোপাল” , আমার ভাই এর মতো - ওর বাড়ি হচ্ছে টাঙিয়া।আমরা দুজন মিলে দরকারে রাত জেগেও কাজ গুলো সেরে ফেলি।
(আমরা বাকিটা
গোপালের কাছ থেকেই জেনে নিলাম যে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এখানে কাজ করছেন, ওনার গ্রাম
টাঙিয়া ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ৫ কি.মি দূরেই ।)
প্রতিমার
দাম গুলো
কম বেশি
কেমন -আর
অগ্রিম কত দিতে
হয় আপনাকে
একটু যদি
বলেন ?
-৮০,০০০ টাকা থেকে ৪৫,০০০ ,৩৫,০০০,৩২,০০০ টাকার মধ্যে। কিছু টাকা প্রথমে-বাকিটা ঠাকুর দেওয়ার সময় দিলেই হয়।
আজ আপনি এতটা সফল আর নিজেই সখটাকেই পেশা
করে তুলেছেন এতে আপনি নিজে কতটা আনন্দিত ?
- আমি খুব খুশি আমি যদি আজ কে অন্য কোথায় চাকরিও করতাম এতটা
খুশি থাকতে পারতাম না আমার চেষ্টা তো ছিলই কিন্তু এই চেষ্টায় অনেক বেশি সহযোগিতা পেয়েছি আমার মিসেস এর কাছ থেকে।আমরা বিয়ে করি ১৯৯৮ তে, আমার মিসেস
কিন্তু একজন বাঙালি।আর
সেই জন্যেই বোধ হয় আমি এতটা সাপোর্ট পেয়েছি। আমি সত্যি খুব Satisfied আমার কাজ এ।
সত্যি ওনার কাছে Interview নিয়ে কত অজানা
কাহিনী জানতে পেলাম ,যেটা আমাদের যুব সমাজের কাছে Inspiration তো বটেই।ঝাড়গ্রামে ওনার
বাড়ির সামনেটাকে কলকাতার কুমারটুলি থেকে কোনো অংশেই কম মনে হয় না । নিজের নেশা কেই পেশা বানিয়ে সফলতার সাথে
কাজ করে চলেছেন। যা আমাদের প্রত্যেক ঝাড়গ্রামবাসীদের কাছে গর্ব করার মতো বিষয়
।
ওনার আগামী দিন গুলো আরো সাফল্যময় হয়ে উঠুক এই শুভকামনা রইলো আমাদের Dear Jhargram
Team এর তরফ থেকে।
https://www.facebook.com/dearjhargram
No comments:
Post a Comment