Friday, 16 June 2017

ঝাড়গ্রামের ভূত








ঝাড়গ্রামের  ভূত 


সময়টা ২০০৫ -

তখন আমরা বন্ধুরা রঘুনাথপুরের ১ প্রাইভেট কোচিং এ পড়তে যেতাম ইংরেজি স্যার এর কাছে। পড়ার ফাঁকে আড্ডা মারার অভ্যেস সবারই থাকে , আমাদের ও তার ব্যতিক্রম ছিল না। আমাদের মধ্যে সৌমেন নামের ১ বন্ধু হটাৎ ১ দিন দাবি করলো যে - ঝাড়গ্রামের শ্মশানের পাশের রাস্তায় নাকি ভূতের কার্যকলাপ বেড়ে উঠেছে। প্রথমটাই আমরা বিশ্বাস না করলেও সে তার যুক্তি দিয়ে আমাদের বুঝিয়েই ছাড়বে। সে জানালো যে ওর মামার পুরোনো ঝাড়গ্রাম এ বাড়ি , ঝাড়গ্রাম জুবলী মার্কেট এ তার দোকান আছে - তো বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেশ ভালোই রাত হয়ে যায়. রাত ১০.৩০ নাগাদ বাড়ি ফেরার টাইম এ সাইকেল চালিয়ে যখনই শ্মশানের পাশের রাস্তাটা দিয়ে যান , ওনার নাকি মনে হতো কেউ তার সাইকেলটা পেছন দিকে টানছে। সাইকেল চালাতে গিয়ে বেশ কষ্টই হতো প্যাডেল এর ওপর খুব চাপ দিয়ে তাড়াতাড়ি নাকি রাস্তা পেরিয়ে যেতেন। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা কথাগুলো কেউ এ তেমন আমল দিলাম না , উল্টে মজা করে বলতাম তোর মামা তোকে ছেলেভোলানো গল্প শোনায়।

তো একদিন সৌমেন আমাদের চ্যালেঞ্জ করে বললো - ঠিক আছে তোরাই গিয়ে দেখনা কি হয় ঠিক রাত ১০.৩০ এর পরে শ্মশানের পাশের রাস্তায় ??

আমরা ঠিক করলাম তাই হবে তবে সৌমেন কে সাথে নিয়ে তবেই যাওয়া হবে।

আমাদের কোচিং থেকে ছুটি হতো রাত ঠিক ৯.৩০ নাগাদ। বাড়িতে ১৫ মিনিট দেরি করলেই কৈফিয়ত চাওয়া হতো।

কি করা যায় ?? প্ল্যান হলো বাড়িতে জানাবো তন্ময় এর জন্মদিন ,তাই ছুটির পর ওদের বাড়িতে যাবো।

এক শনিবার রাতের সেই মতো আমরা বেরিয়ে পড়লাম। কেন শনিবার ?? সৌমেন এর মামার সাথে নাকি ঠিক শনিবার এমনটা হয়। তাই আজকাল শনিবার হলেই ১০.৩০ এর আগে ফিরে আসতো বাড়ি।

আকাশ মেঘাছন্ন , তবে বৃষ্টি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই - এসে পড়লাম ঝাড়গ্রাম শ্মশানের কাছে।

সৌমেন কে বললাম - কিরে তোর ভূত বাবাজি কোথায় ??

সৌমেন বললো ভূত তাকে দেখা যায় বলিনি তো ? বলেছি অনুভব করা যায় –

সাইকেল চালাই চল পাশের রাস্তাটায় এই তো ১০.৩০ হতে চললো।
তথন এখন কার মতো ওই ঝাড়গ্রাম শ্মশানের কাছে এত আলো ছিল না। ভূত এ বিশ্বাস করি কিনা ঠিক জানি না তবুও গা টা কিন্তু একটু হলেও ছমছম করছিলো।

বেশ কিছুক্ষন আমরা রাস্তাটার এপার ওপর হলাম কিছুই বুঝলাম না তেমন কিছুই।

অবশেষে আমি বললাম চল ভাই ভূতটা বড়ো লাজুকে আমাদের হয়তো দেখা দেবে না , তোর মামা কেই দেখা দেয় খালি।

হটাৎ !!! আমার কেমন যেন সাইকেল চালাতে কষ্ট হলো। বুঝলাম কেউ পেছন থেকে আমার সাইকেল টা টানছে পেছনে।

সৌমেন এর চিৎকার এ তন্ময় জোরে সাইকেল চালিয়ে দিলো । তন্ময়ের সাইকেলের পেছন এর ক্যারিয়ার এ সৌমেন বসে ছিল, এক ঝটকায় সৌমেন পরে গেল রাস্তায়। আমিও ভয় এ পালতে লাগলাম জোরে সাইকেল চালিয়ে ।

কিছুটা দূরে গিয়ে আমি আর তন্ময় দেখলাম সৌমেন প্রানপনে ছুটে আমাদের কাছে আসছে।

কাছে এসেই হাঁফাতে হাঁফাতে সৌমেন বললো তাড়াতাড়ি বাড়ি পালাবো চল।

সেদিন রাতে সৌমেন কিন্তু আমাদের সাথে আর একটাও কথা বলেনি।

আমরা যে যার বাড়ি ফিরেও এলাম। বাড়ি ফিরে আমি সে রাতে অনেক ভাবলাম ব্যাপারটা নিয়ে -

 

পরের দিন সকালে আমি সৌমেন এর বাড়ি গিয়ে ওর সাথে দেখা করলাম।

ওকে বললাম ভাই আমায় ভালোই বোকা বানানোটা ব্যবস্থা করেছিলি বল ?? কাল তুই আমার সাইকেলটা পেছন থেকে টান মেরে পালাচ্ছিলি বল ??

সৌমেন মাথা নাড়লো আর বললো সরি ভাই তোকে ভয় দেখতে গিয়ে নিজেই যে ভূত এর কবলে পড়বো ভাবিনি।

মানে ??

সৌমেন মুখ শুকনো করে বললো -

মানে কাল রাতে আমায় কোনো অদৃশ শক্তি সাইকেল থেকে ফেলে দিয়েছিলো , আমি যখন উঠতে গেলাম অনেক কষ্টে উঠতে হয়েছে মনে হলো কেউ চেপে রাখতে চাইছিলো , যখন দৌড় লাগালাম তখন কেউ আমার পেছন এ ছুটে আসছিল। তুই আমায় ক্ষমা করে দে ভাই।

বোঝো কান্ড ??

সত্যি কি সেদিন তাই ঘটেছিলো ?? না পুরোটাই সৌমেন এর মস্তিষ্ক প্রোষিত ভয়ের সমন্বয়ে illusion মাত্র ??

➤ব্যাপারটা আপনারাই বিবেচনা করুন - কিংবা চলে যেতেও তো পারেন ?? শনিবার ঠিক রাত ১০.৩০ এ - ঝাড়গ্রাম শ্মশানের পাশের রাস্তাটায় একটু ঘুরেই দেখে যান না ??

- হয়তো মিলেও যেতে পারে এর কোনো সদুত্তোর ।


No comments:

Post a Comment

Featured post

My friend

At a rainy night . For the first time I discovered you in the outside of our house - the little white black body was rolling back from th...